কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে কী করবেন ?


শীতকালে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি লেগে থাকে। কফ জমে গেলে সেটি দীর্ঘদিন ভোগায়।  নানা ওষুধেও কাশি সহজে দূর হয় না।

অনেকের কাশির সঙ্গে রক্তও যায়। যেটিকে রক্তকাশি বলা হয়। রক্তকাশি রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্যই একটি ভীতিকর লক্ষণ। এ রকম মনে হলে প্রথমেই কাশিতে রক্তের পরিমাণ দেখতে হবে। যদি ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ মিলি বা তার বেশি রক্ত যায়, তাকে ম্যাসিভ বা বৃহদায়তন রক্তকাশি বলে।  এ ধরনের রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। 

কফের সঙ্গে রক্ত গেলে আতঙ্কিত হওয়ারই কথা। কাশতে কাশতে রক্ত যাওয়া মানেই যক্ষ্মা- ধারণাটি কিন্তু ঠিক নয়। যদিও আমাদের দেশে যক্ষ্মার হার অনেক বেশি এবং কফের সঙ্গে রক্ত গেলে যক্ষ্মা পরীক্ষা করা জরুরি।  তবু ভুলে গেলে চলবে না যে, যক্ষ্মা ছাড়াও এ সমস্যার আরও নানা কারণ থাকতে পারে।

দীর্ঘদিনের কাশি, প্রচুর কফ নিঃসরণ, সঙ্গে রক্তপাত, যক্ষ্মা বা ফুসফুসে প্রদাহের পুরনো ইতিহাস থাকলে ব্রংকিয়েকটেসিস নামের এ ধরনের রোগের কথা ভাবা হয়। সাধারণ এক্স-রের চেয়ে বুকের সিটি স্ক্যানে এ রোগ ধরা পড়ে ভালো। 

সাধারণ নিউমোনিয়াতেও হঠাৎ অনেক জ্বর, বুকব্যথা ও কাশির সঙ্গে মরিচা রঙের কফ হতে পারে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, দুর্গন্ধযুক্ত কাশি ও কফের সঙ্গে রক্ত যায় ফুসফুসে ফোড়া হলে। বয়স্ক ব্যক্তির কাশি, গলা বসে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্তপাত, ওজন হ্রাস জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে ফুসফুসের ক্যান্সারের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।

ফুসফুসের রোগেই শুধু কফের সঙ্গে রক্তপাত হয়, তা নয়। নানা রকম হৃদরোগেও হতে পারে।  যেমন বাতজ্বরের ইতিহাস, বুক ধড়ফড়ানি ও কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে হৃদযন্ত্রের ভালভজনিত সমস্যায়। বুকের রক্তনালিতে হঠাৎ বাধা (পালমোনারি অ্যাম্বলিজম), শ্বাসকষ্ট ও কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। কিছু ওষুধের কারণে দেহের রক্তপাতের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রক্তরোগ, যেমন হিমোফিলিয়া, লিউকোমিয়া হলে যে কোনো ধরনের রক্তপাত হতে পারে।

ফুসফুসের শ্বাসনালি রক্তে পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে ফুসফুসের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের আদান-প্রদান ব্যাহত হয়ে রোগীকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। এ কারণে ম্যাসিভ রক্তকাশির রোগীকে তাৎক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করে শ্বাসনালিতে টিউব দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হয়। যে ধমনি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে— তা চিহ্নিত করে ধমনিতে এমবোলাইজেশন করতে হবে অথবা ফুসফুসের এ অংশটি কেটে বাদ দিতে হবে।

রক্তের পরিমাণ কম হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় রক্তকাশি সেরে যায়। চিকিৎসার পরও যদি না সারে, সে ক্ষেত্রে ধমনি এমবোলাইজেশন ও সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।  যেসব ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে না, সেসব রোগীকে নির্দিষ্ট সময়ে ফলোআপ দিতে হবে।

কারণ যা-ই হোক, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সঠিক রোগের ইতিহাস ও সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। এ ধরনের উপসর্গের পেছনে লুকিয়ে থাকে নানা জটিল রোগ।

Comments

Popular posts from this blog

Cambodia Tour

How to Create a Travel Itinerary

Burj Al Arab - A global icon of Arabian luxury

E-Passport

Top 5 Attractive Places In Paris

Places To Visit In Kolkata

How To Reduce Hotel Expenses

Best Places For Sky Diving In The World

Top Islands in Bangladesh

Dubai Desert Safari